
আমি বরাবরই ডিমের পক্ষে
Written by: Imtiaz Mahmudজেরুজালেম পুরস্কার
হারুকি মুরাকামি " আমি বরাবরই ডিমের পক্ষে"
আমি আজ জেরুজালেম এসেছি ঔপন্যাসিক পরিচয়ে। একজন ঔপন্যাসিক গল্প বানান আর এটা করতে গিয়ে তিনি ক্রমাগত মিথ্যার চরকা কাটেন।
তবে কি ঔপন্যাসিক কেবল একাই মিথ্যা বলেন? সে রকম মোটেই নয়। রাজনীতিবিদেরা এ ব্যাপারে বেশ পারদর্শী, এটা আমরা মোটামুটি সবাই জানি। কূটনীতিবিদ ও সামরিক বাহিনীর লোকদেরও মাঝেমধ্যে মিথ্যা বলতে হয়। তারা সেটা তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে বলে থাকেন।
মনে করে নিই, একজন লোক পুরোনো গাড়ি বিক্রি করেন। তিনি যদি মিথ্যা বলা বন্ধ করে দেন, তবে তার ব্যবসায় লালবাতি জ্বলে যাবে। একইভাবে একজন কসাই কিংবা আবাসন ব্যবসায়ী, সবাই কিছু না কিছু মিথ্যা বলেন।
তবে একজন ঔপন্যাসিকের বলা মিথ্যাগুলো বাকি সবার থেকে আলাদা। কারণ, অন্য পেশার মানুষ মিথ্যা বললে তাকে অসৎ লোক বলা হয়। অথচ একজন ঔপন্যাসিকের সে রকম কোনো অসুবিধা নেই। বরং তার মিথ্যাগুলো যত বড় হয় এবং সেগুলো বলতে তিনি যত বেশি কৌশলের আশ্রয় নেন, যত নিখুঁতভাবে বলতে পারেন, সাধারণ মানুষ ও সমালোচক তার তত বেশি প্রশংসা করেন। এ রকম কেন হয়?
আমার উত্তরটা হলো, একজন ঔপন্যাসিকের কাজই হলো দক্ষতার সঙ্গে মিথ্যা বলা। অথবা ব্যাপারটাকে এভাবেও বলা যেতে পারে যে, তিনি একটা কাল্পনিক প্লটকে সত্য বলে হাজির করেন। মিথ্যার ওপর নতুন আলো ফেলে সেটাকে সত্যের রূপ দেন। আপনি যদি কোনো একটা সত্যকে সরাসরি তার নিজস্বরূপে মুঠোবন্দি করতে চান, সেটা মোটামুটি অসম্ভব একটা কাজ।
এ কারণে আমরা যারা লিখি, তারা মূল সত্যটাকে একটু অন্যভাবে উপস্থাপন করি। সত্যটা যেখানে আত্মগোপন করে আছে, সেখান থেকে তাকে প্রথমে লেজ ধরে টেনে বের করি। তারপর আমাদের কল্পনাশক্তি দিয়ে তার অন্য একটা রূপ দিই। অন্য একটা কাল্পনিক জায়গায় এবং কাল্পনিকরূপে সেই সত্যকে গল্পের ছলে বলে দিই।
তবে এটা করতে গিয়ে প্রথমেই আমাদের ভেতরকার মূল যে সত্য, অর্থাৎ আমরা কী বলতে চাচ্ছি সে জায়গাটায় পরিষ্কার থাকতে হবে। এখানে অসততার কোনো সুযোগ নেই। মিথ্যা গল্প বানানোর এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা শর্ত।
আজ আমি আপনাদের মধ্যে এসেছি কোনো মিথ্যা বলতে নয়, যত দূর সম্ভব সৎ থেকে আমার কথাগুলো বলার চেষ্টা করব। বছরে অল্প কিছু দিন আছে, যে কটা দিন আমি মিথ্যা কথা বলি না। আজ ঠিক সে রকম পরিষ্কার একটা দিন।
সুতরাং, এখন আপনাদের কিছু সত্য বলে ফেলা যাক। বেশ কিছু লোক আমাকে এখানে আসতে নিষেধ করেছিল। তারা বলেছে, জেরুজালেম পুরস্কার গ্রহণ করার দরকার নেই। তারা এই ভয়ও দেখিয়েছে যে, আমি যদি এখানে আসি, তাহলে তারা আমার বই বয়কট করবে।
এর পেছনে কারণটা খুব একটা অস্পষ্ট নয়। আপনারাও নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন। গাজায় যে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে সেটাই কারণ। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাজারের ওপর লোক অবরুদ্ধ গাজা নগরীতে মৃত্যুবরণ করেছে। এর মধ্যে অনেকেই আছে, যারা নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিক। বোমা-বন্দুকের সঙ্গে তাদের ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই। এই তালিকায় বিপুলসংখ্যক শিশু ও বৃদ্ধও আছে।
পুরস্কার ঘোষণার পর থেকে আমি অনেকবার নিজেকে প্রশ্ন করেছি, আমি আসলে ইজরাইলে যেতে চাই কি না; তাদের দেওয়া সাহিত্য পুরস্কার গ্রহণ করা উচিত হবে কি না; এতে ভুল বোঝাবুঝির কোনো সুযোগ আছে কি না। ধরা যাক, আমি পুরস্কারটি গ্রহণ করলাম। এখন ব্যাপারটাকে হয়তো কিছু লোক এভাবে বিচার করবে যে, চলমান যুদ্ধে আমি কোনো এক পক্ষকে সমর্থন করছি। আর তাই সে পক্ষের দেওয়া পুরস্কার গ্রহণ করেছি।
সামরিক শক্তি প্রদর্শন করে এ রকম কোনো রাষ্ট্রকে সমর্থন করছি বলে বিষয়টাকে ব্যাখ্যা করা হতে পারে। এ ধরনের কোনো ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ হোক এটা আমি কখনই চাই না। কোনো প্রকার যুদ্ধ-বিগ্রহ আমি সমর্থন করি না। কোনো নির্দিষ্ট রাষ্ট্র আমার প্রিয় নয় এবং এটাও সত্য যে, আমার লেখা কোনো বই মানুষ বয়কট করবে, এটা আমি সহ্য করতে পারব না। সেই হিসাবে এখানে আসার যুক্তিগ্রাহ্য কোনো কারণ আমার নেই।
তবু সবকিছু বিবেচনা করে বেশ সতর্কতার সঙ্গে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমাকে জেরুজালেম যেতে হবে। এর পেছনের একটা কারণ বলি। আগেই বলেছি যে, অনেক লোক আমাকে এখানে আসতে নিষেধ করেছিল। যাঁরা গল্প-উপন্যাস লেখেন, তাঁদের একটা সমস্যা আছে। মানুষ যেটা করতে না করে, তাঁরা সেটা বেশি বেশি করে করার চেষ্টা করেন। কোনো ধরনের নিষেধ বা নিষেধাজ্ঞা মানতে চান না। আমাকে যদি কেউ সতর্ক করে দেয়, 'ওখানে যেয়ো না' বা 'ওটা কোরো না', আমি সেই নিষিদ্ধ জায়গায় যাওয়ার জন্য বা সেই নিষিদ্ধ কাজটা করার জন্য মোটামুটি অস্থির হয়ে পড়ি। এটা আমার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
শুধু আমার কেন, ধরে নিতে পারেন, এটা লেখকদের চরিত্রের একটা বিশেষ দিক। লেখকেরা এক বিশেষ প্রজাতির মানুষ। কোনো জিনিসকে নিজের চোখে না দেখলে বা নিজের হাতে স্পর্শ না করলে তারা বিশ্বাস করেন না যে ওটার কোনো অস্তিত্ব আছে।
এ কারণেই আমি এখানে এসেছি। আপনাদের থেকে দূরে থাকতে পারতাম। কিন্তু তার বদলে আপনাদের মধ্যে উপস্থিত হয়েছি। এখানে আসলে কী ঘটবে, সেটা দেখার লোভ সামলাতে পারিনি। ইচ্ছা করলে নাও আসতে পারতাম। তাহলে হয়তোবা কিছুই বলা হতো না। তবে আপনাদের মধ্যে উপস্থিত হয়ে এ কথাগুলো বলাটা আমার কাছে জরুরি বলে মনে হয়েছে।
আপনারা আবার ভেবে বসবেন না যে, আমি কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে এখানে এসেছি। যদিও কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক সেটা বিচার করা একজন ঔপন্যাসিকের দায়িত্ব। এই কাজ করা তার জন্য অবশ্যকর্তব্য বলে আমি মনে করি।
এই কতর্ব্যটুকু একেকজন লেখক একেকভাবে করেন। যার যার নিজস্ব পদ্ধতিতে। অন্যদের কথা বলতে পারব না। আমার পদ্ধতিটা আমি আপনাদের বলি। আমার ক্ষেত্রে, আমি যে
ধারণাটাকে ঠিক বলে মনে করি, সেটাকে একটা গল্পের মাধ্যমে বলার চেষ্টা করি। সরাসরি কোনো কিছু নিয়ে মন্তব্য করাটা আমার স্বভাবে নেই। সত্যটাকে এক ধরনের পরাবাস্তব কাঠামো দিয়ে রূপকের মাধ্যমে বলতে ভালোবাসি। আজও আমি সে রকম কিছু একটা করব। সরাসরি কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য না দিয়ে অন্যভাবে আমার বার্তা আপনাদের কাছে পৌছ দেওয়ার জন্য আমি
এখানে দাঁড়িয়ে আছি।
এবার আমাকে মনের ভেতরকার খুব ব্যক্তিগত একটা বার্তা আপনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার অনুমতি দিন। এটা এমন এক বার্তা, যা আমার চেতন বা অবচেতনমনে সবসময় প্রভাব ফেলে। আমি যখন কোনো গল্প বা উপন্যাস লিখি, আমার মধ্যে মেসেজটা খোঁচাতে থাকে। যে কথাটা এখন বলব, সেটা এর আগে কাগজে-কলমে লিখিনি। ইচ্ছা করলে কথাটা লিখে দেয়ালে টাঙিয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু তার বদলে আমার মনের দেয়ালের মধ্যে কথাটা পুষে রেখেছি। তাহলে শুরু করা যাক:
'ধরা যাক, একটা খুব উঁচু আর শক্ত দেয়াল আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একটা ডিম কেউ একজন হাতে তুলে নিল এবং সেই দেয়ালের দিকে ছুড়ে মারল। এখানে দুটি পক্ষ। একটা দেয়াল। আর একটা ছুড়ে মারা ডিম। আপনাদের জানিয়ে রাখি যে, আমি দ্বিতীয় পক্ষে। আমার এই অবস্থান সবসময়ের জন্য।'
হ্যাঁ, আমি ছুড়ে মারা ডিমের পক্ষে। দেয়ালের যত গুণই থাকুক বা ডিমটার যত দোষই থাকুক না কেন, আমি সবসময় ডিমের পক্ষে। কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক, এগুলো বিচার করার জন্য পৃথিবীতে যথেষ্ট লোক আছে। তারা যদি নাও থাকে, সময় ও ইতিহাস আছে সেই বিচারের জন্য। কালের বিচারকে কেউ ফাঁকি দিতে পারে না। তবে বিষয়টা হলো এই যে, একজন ঔপন্যাসিক হিসেবে দেয়ালের পক্ষে কথা বলার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য কারণ আমি খুঁজে পাই না। পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে অর্থহীন।
এই যে কথাগুলো বললাম, এগুলোর মানে কী? এগুলো কি মেটাফর? কিন্তু মেটাফর হলেও তো তাতে কোনো একটা অর্থ থাকবে। এমনি এমনি মেটাফর হয়? অর্থটা খুব সাধারণ ও পরিষ্কার। বোমারু বিমান, ট্যাংক, রকেট অথবা ফসফরাস বোমা হলো শক্ত দেয়াল। আর সেই দেয়ালের দিকে ছুড়ে মারা ডিমগুলো হলো আমজনতা। তাদেরকে শক্ত দেয়ালে ছুড়ে মারা হয় এবং তারা ভেঙে যায়। মেটাফরের এটা একটা অর্থ হতে পারে।
কিন্তু এটাই সব নয়। এর আরও গভীর অর্থ আছে। আপনারা একটু অন্যভাবে ভাবুন। এভাবে ভেবে দেখার চেষ্টা করুন যে আমরা সবাই কমবেশি ওই ছুড়ে মারা ডিমটার মতো। আমাদের একটা করে হৃদয় আছে। সেই হৃদয়টা একান্ত আমাদের। আপনার যদি কখনো সেই হৃদয় বদলে অন্য একটা হৃদয় পেতে ইচ্ছা করে, সেটা পাবেন না। সেই অতি ব্যক্তিগত হৃদয়টা নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত একটা শক্ত দেয়ালের মোকাবিলা করে যাচ্ছি। বলা যেতে পারে যে, আমরা প্রত্যেকেই কম বা বেশি সেই দেয়ালে গিয়ে আছড়ে পড়ছি।
ব্যাপারটা আমার ক্ষেত্রে যেমন সত্য, আপনাদের ক্ষেত্রেও তাই এবং এই যে দেয়ালের কথা আমি এতক্ষণ ধরে বললাম, এটাকে এবার একটা নাম দেওয়া যাক। আপনারা জিনিসটাকে একটা গালভরা নামে চেনেন। সেই নামটা হলো 'সিস্টেম'। সিস্টেমের জন্মই হয়েছে আমাদের প্রতিরক্ষা দেওয়ার জন্য। কিন্তু মাঝেমধ্যেই জিনিসটা বিগড়ে যায়, নিজের খেয়াল-খুশিতে চলতে শুরু করে। সেই সিস্টেম তখন আমাদের মেরে ফেলার পাঁয়তারা করে। আবার কখনোবা আমাদের নিজেদের মধ্যে লেলিয়ে দেয়, যেন আমরা একজন আরেকজনকে মেরে ফেলি। পুরো কাজটা সে করে ঠান্ডা মাথায়, নিয়মের মধ্যে থেকে।
আমি যে গল্প-উপন্যাস লিখি, তার একটা বড় কারণ আছে। মানুষের আত্মার গভীরে তার নিজের জন্য মর্যাদা বা সম্মান লুকিয়ে থাকে। লেখালেখির মাধ্যমে সেই আত্মসম্মানটুকুকে ভেতরের অন্ধকার প্রকোষ্ঠ থেকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে বের করতে চাই। সেখানে সামান্য আলো ফেলতে চাই। একটা বিশেষ সংকেত দেওয়ার লক্ষ্যে গল্পগুলো লিখি। প্রত্যেকটি মানুষের ভেতরেই স্বতন্ত্র আত্মা বাস করে। আমি এটা সর্বতোভাবে বিশ্বাস করি, ঔপন্যাসিকের কাজ সেই বিশুদ্ধ আত্মার জন্য গল্প লেখা, জীবন ও মৃত্যুর গল্প, ভালোবাসার গল্প, সেই সব গল্প, যা মানুষকে হাসায়, কাঁদায় আবার কখনোবা তার শিরদাঁড়ায় ভয়ের চোরাস্রোত বইয়ে দেয়। এ লক্ষ্যেই আমরা যারা গল্প-উপন্যাস লিখি, তারা দিনের পর দিন চেষ্টা করে যাই।
গত বছর আমার বাবা মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। তিনি ছিলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। এছাড়া তিনি বৌদ্ধমন্দিরের প্রধান ভিক্ষু হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কিছুদিন। তিনি যখন গ্র্যাজুয়েট স্কুলে পড়াশোনা করছিলেন, তখন সামরিক বাহিনীতে যোগদানে বাধ্য হন এবং তাঁকে যুদ্ধ করতে চীন দেশে পাঠানো হয়। যুদ্ধের কয়েক বছর পরেই আমার জন্ম হয়। শৈশবে আমি তাঁকে প্রতিদিনই বাড়িতে বসে প্রার্থনা করতে দেখেছি। সকালের নাশতা খাওয়ার ঠিক আগে গৌতম বুদ্ধের একটি মূর্তির সামনে বসে গভীর মনোযোগ সহকারে প্রার্থনা করতেন। একবার তাঁকে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি এই কাজ কেন করেন। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, যুদ্ধে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁদের জন্য এই প্রার্থনা।
যুদ্ধে যারা মারা গেছেন, তাঁদের সবার জন্যই আমার বাবা প্রার্থনা করতেন। শত্রু-মিত্র সবার জন্য। তিনি যখন হাঁটু গেড়ে বসে প্রার্থনায় গভীরভাবে মনোযোগী হতেন, আমি পেছন দিক থেকে তাঁকে দেখতে পেতাম। তাঁর শান্ত সমাহিত সেই রূপের চারদিকে আমি মৃত্যুর গাঢ় ছায়া অনুভব করতাম।
আমার বাবা একদিন মরে গেলেন। সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন তাঁর নিজস্ব স্মৃতি, যে স্মৃতিতে আমার অধিকার নেই, কখনো জানা হয়ে উঠবে না। কিন্তু প্রার্থনারত বাবার চারদিকে যে মৃত্যুর ছায়া ঘুরে বেড়াত, সেই স্মৃতি আমার মধ্যে রয়ে গেল। কিছু কিছু জিনিস মানুষ এক পুরুষ থেকে আরেক পুরুষে বহন করে। মৃত্যুর সেই ঠান্ডা ছায়া আমি আমার বাবার কাছ থেকে পেয়েছি এবং এই স্মৃতি আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আজ একটা কথাই আমি আপনাদের কাছে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই। আমরা মানুষ। বিভিন্ন জাতভেদ আমাদের আছে। আমাদের দেশ আলাদা, ধর্ম পৃথক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা সেই ভঙ্গুর ডিম, যেদিন তাকে দেয়ালে ছুড়ে মারা হবে, সে ভেঙে যাবে। সিস্টেম নামক সেই কঠিন দেয়াল আমাদের ভেঙে দেওয়ার জন্য ওত পেতে আছে। দৃশ্যত এই অসম যুদ্ধে আমাদের জেতার কোনো সম্ভাবনা নেই। আগেই বলেছি, দেয়ালটা অনেক উঁচু, মজবুত আর ঠান্ডা। আমাদের জয় কেবল একটা উপায়ে আসতে পারে। আমাদের আলাদা আলাদা আত্মাগুলোর এক অদ্ভুত শক্তি আছে। সম্মিলিত শক্তিতে যদি একসঙ্গে এই লড়াই চালিয়ে যেতে পারি, শুধু তাহলেই আমাদের জেতার সম্ভাবনা আছে।
যে কথাগুলো বললাম, এটা নিয়ে একটাবার ভাবুন। আমাদের প্রত্যেকেরই একটা স্বতন্ত্র জীবন্ত আত্মা আছে। সিস্টেম বা দেয়ালের এই জিনিস নেই। সেই হিসেবে এটাই তার দুর্বলতা। সিস্টেম যেন আমাদের ব্যবহার করতে না পারে। তাকে নিজের মতো করে যদি আমরা চলতে দিই, তাহলে সেটা আমাদের ভুল। সিস্টেম আমাদের তৈরি করেনি, আমরাই তাকে তৈরি করেছি।
আমার কথা মোটামুটি শেষ। এই কথাগুলো বলার জন্যই আমি এসেছিলাম।
আমার মতো অভাগাকে জেরুজালেম পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি ঈশ্বরের কাছে আরও কৃতজ্ঞ যে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ আমার লেখা বই পড়ে। আমি আনন্দিত যে, আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে এই কথাগুলো আজ বলতে পেরেছি।
অনুবাদঃ আলভী আহমেদ
জেরুজালেমে দেওয়া মুরাকামির এই বক্তৃতা আমার হৃদয় স্পর্শ করে গেছে। আমার মনে হয় প্রকৃত লেখক তার সত্তাকে কখনো বিক্রি করতে পারে না। তার সাথে আলভী আহমেদের দুর্দান্ত অনুবাদ আমাকে পাগল করে দিয়েছে।